প্রকাশিত: ১৬/০৮/২০১৮ ৭:৩৬ এএম , আপডেট: ১৬/০৮/২০১৮ ১১:১৯ পিএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::

মিয়ানমারের আপত্তির কারণে আনুষ্ঠানিক বৈঠক ও চিঠিপত্রে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দ ব্যবহার থেকেই এত দিন বিরত থেকেছে বাংলাদেশ। শরণার্থী মর্যাদার বাইরে থাকা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ সরকারের কৌশলপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে ‘আনডকুমেন্টেড মিয়ানমার ন্যাশনালস’ (মিয়ানমারের অনথিভুক্ত নাগরিক) হিসেবে। গত জুন মাসে বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) যৌথ উদ্যোগে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের যে পরিচয়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, সেখানে তাদের পরিচয় ঠিক করা হয়েছিল ‘ফোরসিবলি ডিসপ্লেসড মিয়ানমার ন্যাশনাল/পারসন অব কনসার্ন টু ইউএনএইচসিআর’ (‘জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক/ইউএনএইচসিআরের আওতাভুক্ত ব্যক্তি’)। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের আপত্তির মুখে ‘জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক’ পরিচয়টুকুও ছেঁটে ফেলতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের গত সপ্তাহে মিয়ানমার সফর এবং সেখানে বৈঠক নিয়ে গত ১১ আগস্ট ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, তাতে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের পরিচয়পত্র সংশোধন নিয়ে কোনো প্রসঙ্গ সরাসরি উল্লেখ নেই। তবে ১০ আগস্ট নেপিডোতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বৈঠকের পরপরই মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলরের দপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা আটটি সিদ্ধান্তের সপ্তম সিদ্ধান্ত হিসেবে বলা হয়েছে, ‘বর্তমানে কক্সবাজারে যারা বসবাস করছে (রাখাইন রাজ্যের বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি) তাদের যে পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে, তার ভাষা বদলাতে বাংলাদেশ সম্মত হয়েছে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের পরিচয়পত্র সংশোধন করে এখন ‘রাখাইন রাজ্যের বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি’ লেখা হবে। কারণ গত বছরের ২৩ নভেম্বর নেপিডোতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার যে চুক্তি সই করেছে, তার শিরোনাম ছিল ‘অ্যাগ্রিমেন্ট অন রিটার্ন অব ডিসপ্লেসড পারসনস ফ্রম রাখাইন স্টেট’ (রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের ফিরে যাওয়া সংক্রান্ত চুক্তি)। বাংলাদেশ বিভিন্ন সময় রোহিঙ্গাদের ‘জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক’ বললেও, ওই চুক্তিতে তাদের মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বাসিন্দা বলা হলেও নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক কূটনীতিক এ প্রসঙ্গে কালের কণ্ঠকে বলেন, উভয় পক্ষ যখন কোনো বিষয়ে একমত পোষণ করে তখনই কোনো চুক্তি হয়। মিয়ানমারে যে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নেই তা সবাই জানে। রোহিঙ্গাদের ‘মিয়ানমারের নাগরিক’ বললেও মিয়ানমার তা স্বীকার করবে না। আবার রোহিঙ্গারা বাস্তুচ্যুত হয়েই বাংলাদেশে এসেছে এ নিয়ে দ্বিমত নেই। কিন্তু ‘জোরপূর্বক’ শব্দটি মিয়ানমার স্বীকার করবে না।

সাবেক ওই কূটনীতিক বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সরকার ও জনগণের বড় অংশের যে মনোভাব তা বিবেচনায় নিলে ওই দেশটির সঙ্গে এ ইস্যুতে সম্পৃক্ত থাকার কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, এ সমস্যা রাতারাতি সমাধান হবে না। আবার মতপার্থক্যের কারণে আলোচনা থেকেও বেরিয়ে আসা যাবে না। বেরিয়ে এলে মিয়ানমারই এ সংকট এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা সংকটকে পুরো দেশের সংকট হিসেবে চিহ্নিত না করে রাখাইন রাজ্যের সংকট হিসেবে সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছে। তবে তারা রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফেরার মতো অনুকূল পরিবেশ এখনো সৃষ্টি করতে পারেনি। পরিবেশ সৃষ্টির আগেই তারা দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর বৈশ্বিক চাপ বাড়ছে। এ মাসেই রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের বার্ষিকী ঘিরে বিশ্ব সম্প্রদায় মিয়ানমারের ভূমিকা মূল্যায়ন করবে। এমন প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক চাপ এড়াতে তড়িঘড়ি করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায় মিয়ানমার। এটি দেশটির একটি কৌশল বলে মনে করা হচ্ছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশও দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য মিয়ানমারকে চাপ দিচ্ছে। প্রত্যাবাসন শুরু হলে এ দেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী একটি ইতিবাচক বার্তা পাবে। তবে প্রত্যাবাসন নিরাপদ ও সম্মানজনক হওয়ার ওপরও বাংলাদেশ গুরুত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশ চায়, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার মতো অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু করুক।

মিয়ানমার থেকে ফিরে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার যে প্রস্তুতি নিয়েছে, তা বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলকে দেখিয়েছে। এটিও তো একটি অগ্রগতি। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় বাসিন্দারা ও সরকার—সবাই আমাদের বলেছে, তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চায়। এটি আগে আমরা শুনিনি।’ কবে নাগাদ প্রত্যাবাসন শুরু হবে—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না কেউ এটা বলতে পারবে।’ পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘যেকোনো দেশের ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রত্যাবাসন ইস্যু বেশ জটিল ও কঠিন। একজন মানুষ বিশেষ পরিস্থিতিতে এখানে এসেছে। সেখানে ফিরে যাওয়ার আগে অনেক কিছু হতে হবে, যাতে তারা আস্থা বোধ করবে।’

শহীদুল হক বলেন, ‘আমি এক বছর আগেই বলেছি, এটি রাতারাতি সম্ভব নয়। এ ধরনের প্রক্রিয়া কখনোই দ্রুত করা সম্ভব নয়। কারণ তারা সেখানে যাবে এবং গিয়ে থাকবে। তাদের জীবন-জীবিকার প্রশ্ন আছে। অনেক ব্যবস্থাপনার বিষয় আছে। সেখানেও একটি সম্প্রদায় আছে। তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার বিষয় আছে। তাড়াহুড়া করলে এটি ঠিক হবে না।’

পাঠকের মতামত

১৫০ বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে ২৮৫ সেনাকে নিয়ে ফিরবে মিয়ানমারের জাহাজ

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জা‌নি‌য়ে‌ছেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ২৮৫ ...

সোনার দামে আবারও রেকর্ড, ভ‌রি‌ ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা

আবারও সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। প্রতি ভরিতে ...